দুদকের নজরে মন্ত্রী-ব্যবসায়ী-আমলারা

দুদকের নজরে মন্ত্রী-ব্যবসায়ী-আমলারা

চ্যানেল নিউজ, ঢাকা : অনিয়ম ও দুর্নীতি দমনে এবার প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই লক্ষ্যে সাবেক মন্ত্রী, আলোচিত ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।
গত মে ও জুন মাসে ‘ছাগল কাণ্ডে’ আলোচিত সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এছাড়া করোনা রিপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল কালাম আজাদ, সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের নামে মামলা করেছে দুদক।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বড় পরিবর্তন এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, আবার কাউকে বদলি করে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল ও বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে অন্যদের আনা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দুদকের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারকে নিয়েও শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, দুদকের শীর্ষ পদে নিয়োগ অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভিন্নতর ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় বর্তমান কমিশনকে রেখেই দুর্নীতি দমন কার্যক্রম চালাতে চায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে দুদক চেয়ারম্যান, কমিশনার ও সচিবকে পদত্যাগের জন্য আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, পদত্যাগ নয়, ছাত্র-জনতার আস্থা অর্জনে নির্ভয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক দুদকের হাইকমান্ড। এজন্য বিগত সরকারের দুর্নীতিবাজ শীর্ষ আমলা-মন্ত্রী ও অনিয়মে জড়িত ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

আসাদুজ্জামান খান ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেন- মন্ত্রীর সাবেক পিএস ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু।

জানা গেছে, দুদকের তদন্ত দলকে সার্বক্ষণিক একটি গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। দ্রুত অভিযুক্তদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করার নির্দেশনা রয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামান খান ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ দিতেন। আসাদুজ্জামান খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ঘুষ হিসেবে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এই টাকা আদায় করা হতো। এজন্য তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে হারুন অর রশীদ অবসরে গেলেও এই মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ঝুঁকি এড়াতে টাকাগুলো পাঠানো হয়েছে দেশের বাইরে।

এছাড়া আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম (এস আলম) ও পদ্মা ব্যাংকের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এই দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।

দুদক সূত্রে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) একাধিক প্রভাবশালীর সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব তথ্য পাওয়া গেলে আরো প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে পারে দুদক। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সদ্য পদত্যাগ করা বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিক্সন চৌধুরী প্রমুখ।

যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক বাড়ি রয়েছে এমন অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। সোবহানের সম্পদ অনুসন্ধানে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট’ (এমএলএআর) করেছে দুদক।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বেশ কিছুদিন অফিস করেননি দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং দুই কমিশনার মো. জহুরুল হক ও আছিয়া খাতুন। তবে গত ১৪ আগস্ট থেকে তারা অফিস করছেন।

আরেকটি সূত্রের দাবি, গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন এই তিন কর্মকর্তা। দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম আরো শাণিত করতে একমত হয়েছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা।

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, দুদকের কার্যক্রমে কোনো স্থবিরতা বা চাপ নেই। আমরা স্বাভাবিক কাজটাই করে যাচ্ছি। আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করছে কমিশন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

themesbazartvsite-01713478536